২৩ জানুয়ারী, ২০২৩

এক নজরে বাংলাদেশের আদালত সমূহ- Court Structure of Bangladesh

বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থায় নিম্ন বর্ণিত উল্লেখযোগ্য কোর্ট ও ট্রাইব্যুনাল রয়েছেঃ

উচ্চ আদালত: (The Supreme Court of Bangladesh) (অনুচ্ছেদ ৯৪, ৯৫):  আমাদের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট হলো বাংলাদেশের উচ্চ আদালত যার দুটি বিভাগ আছে- হাইকোর্ট বিভাগ আপীল বিভাগ। এটিকে বলা হয় সাংবিধানিক আদালত কারণ সুপ্রীম কোর্টের সবকিছু সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হলো বিচার বিভাগের প্রধান। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি কতজন হবে তার নির্দিষ্ট কোন সীমা নাই, রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিয়োগ দিবেন।

দেওয়ানী আদালত: (Civil Courts): Civil Court Act 1887 এর ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।  দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা যেমন- “সম্পত্তির অধিকারমএবং কোন পদে থাকার অধিকারইত্যাদি নিষ্পত্তি করে থাকে।  দেওয়ানী আদালতের বিভিন্ন এখতিয়ার আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট। বাংলাদেশে দেওয়ানী আদালত সমূহ হল
১. জেলা জজ আদালত, ( সাধারণত আদি  এখতিয়ার নেই ব্যতিক্রম- প্যাটেন্ট, কপিরাইটসাকসেশন
২. অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, (জেলা জজ  কর্তৃক অর্পিত মামলা) 
৩. যুগ্ম জেলা জজ আদালত, (২৫,০০,০০১- অসীম  পর্যন্ত) 
৪. সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও  .  (১৫,০০,০০১- ২৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত) 
৫. সহকারী জজ আদালত। (আর্থিক এখতিয়ার  .  ১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত) 
যুগ্ম জেলা জজের ৫,০০,০০০,০০ টাকার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল করা যাবে। ৫,০০,০০০,০০ টাকার উপরে হলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যায়।

বিশেষ দেওয়ানী আদালতসমূহ (Special Civil Courts):

পারিবারিক আদালত: (Family Court): পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক আদালত-
বিবাহ বিচ্ছেদ
• দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, 
• দেনমোহর, 
• ভরণপোষণ এবং 
• অভিভাবকত্ব বিষয়ে মামলা নিষ্পত্তি করে। (ধারা ৫)

সকল সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত এবং সকল সহকারী জজ পারিবারিক আদালতের বিচারক হিসাবে গণ্য হবে। পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল দায়ের করা যায়।

স্মল কজ আদালত: (Small Causes Court):Small Cause Courts Act, 1887 এর ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। যুগ্ম জেলা জজ (২৫,০০০ টাকা ) , সিনিয়র সহকারী জজ (১৫,০০০ টাকা) এবং সহকারী জজ (১০,০০০ টাকা) আদালতসমূহ স্মল কজ আদালত হিসাবে এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে। স্মল কজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধেমজেলা জজ আদালতে আপীল দায়ের করা যায়। (ধারা-২৪)

অর্থ ঋণ আদালত: (Artha Rin Adalat): অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ধারা অনুযায়ী অর্থ ঋণ আদালত প্রতিষ্ঠিত। সাধারণত যুগ্ম জেলা জজ পদ মর্যাদার বিচাকগণ অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক নিযুক্ত হন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় সংক্রান্ত মামলা স্থাবর সম্পত্তির জামানত স্বরূপ বন্ধক গ্রহণপূর্বক প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে উক্ত বন্ধকী স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় ফোরক্লোজার সংক্রান্ত মামলা অর্থ ঋণ আদালতে নিষ্পত্তি করা হয়। অর্থঋণ আদালত কর্তৃক ডিক্রিকৃত টাকার পরিমান ৫০,০০,০০০ টাকার কম হলে জেলা জজ আদালতে আপীল দায়ের করতে  হবে অন্যদিকে ৫০,০০,০০০ টাকার বেশি হলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে। (ধারা-৪১)

ফৌজদারী আদালত: (Criminal Court): বাংলাদেশের ফৌজদারী আদালতসমূহ ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে ফৌজদারী আদালত দুই প্রকার। 
1. দায়রা আদালত
2. ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। 
দায়রা আদালতঃ দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ এবং যুগ্ম দায়রা জজ নিয়ে গঠিত। 
জেলা পর্যায়ে-  
• চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, 
• অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, 
• সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট 
• প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রে 
• দ্বিতীয় শ্রেণী ম্যাজিস্ট্রেট এবং 
• তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট। 
মহানগর এলাকায়-
• চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, 
• অতিরিক্ত চীফমেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, 
• মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি। 

ফৌজদারী আদালত দণ্ডবিধির অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার নিষ্পত্তি করে এবং ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে বিশেষ আইনে সংঘটিত অপরাধের বিচার নিষ্পত্তি করে।

বিশেষ ফৌজদারী আদালত সমূহঃ

দ্রুত বিচার আদালত: ( Druto Bichar Adalat): আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ এর ধারা অনুসারে দ্রুত বিচার আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।  একজন প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দ্রুত বিচার আদালতে নিযুক্ত করা হয়।  দ্রুত বিচার আইন ২০০২ এর অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার নিষ্পত্তি করে। রায়ের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপীল দায়ের করা যায়। (ধারা-১২)

শিশু আদালত: (Shishu Adalat): শিশু আইন ২০১৩ এর ধারা ১৬ অনুসারে প্রত্যেক জেলার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু আদালত হিসাবে গণ্য হবে। নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল না থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা দায়রা জজ আদালত শিশু আদালত হিসাবে গণ্য হবে। শিশু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যায়। (ধারা ৪১)

ট্রাইবুনাল:

নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল: (Nari O Shishu Nirjaton Damon Tribunal): নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ধারা ২৬ এর অধীনে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাধারণত ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণের ফলে মৃত্যু, যৌতুক দাবী করে স্ত্রীকে নির্যাতন, খুন, নারী শিশু অপহরণ এবং নারীর শ্লীলতাহানী ইত্যাদি অপরাধের বিচার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হয়। উক্ত ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যায়। (ধারা-২৮)

মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল: (Manob Pachar Damon Tribunal): মানব পাচার অপরাধ দমন আইন ২০১২ এর ২১ ধারা অনুযায়ী মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হন। মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধের বিচার উক্ত ট্রাইব্যুনাল নিষ্পত্তি করে। মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যায়। (ধারা-৩১)

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল: (Special Tribunal): বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৬ ধারা অনুসারে প্রত্যেক দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত এবং যুগ্ম দায়রা জজ আদালত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হিসাবে বিবেচিত হবে। সাধারণত বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনস্ত অপরাধ যেমন-চোরাচালান, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে সংঘটিত অপরাধের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হয়ে থাকে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায়, আদেশ এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট আপীল দায়ের করা যায়। (ধারা-৩০)

 


শেয়ার করুন

0 comments: